চট্টগ্রাম, ৬ জুলাই ২০২৫:
পবিত্র মহরম মাসের ১০ তারিখে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গভীর শোক ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়েছে তাজিয়া মিছিল ও ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে শিয়া সম্প্রদায়সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কারবালার বিয়োগান্ত ইতিহাস স্মরণে অংশ নেন শোকের মাতমে। হাতে নিশান, বুকে শোকের প্রতীক ধারণ করে হাজারো মানুষ অংশ নেন মিছিলে।
চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল জাউতলা ওয়্যাললেস থেকে শুরু হয়ে টাইগার পাস, নিউমার্কেট, কাজির দেউরি, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড় ঘুরে পুনরায় ওয়াল্লেস এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পুরো মিছিল জুড়েই শহরের রাস্তায় কালো পোশাকে শোকাভিভূত জনতার ঢল নামে। হাতে ‘হায় হোসেন’, ‘হায় আব্বাস’ লেখা পতাকা, মুখে শোকের স্লোগান, আর বুকে মাতম করতে করতে হাজারো মানুষ স্মরণ করেন কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ।
বয়স্ক থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ মিছিলে অংশ নেন। অনেকেই বুক চাপড়ে মাতম করেন এবং চোখে অশ্রু নিয়ে ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মোৎসর্গের স্মৃতি ধারণ করেন হৃদয়ে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। মহানগর পুলিশ মোতায়েন করে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ট্রাফিক পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক দল। এছাড়া, প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে চিকিৎসা বুথ স্থাপন করা হয়, যা ছিল প্রশংসনীয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা বলেন,
“কারবালার ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। হোসেন (রা.) কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি ন্যায়ের প্রতীক, আমাদের আদর্শ।”
তাজিয়া মিছিলে কারবালার যুদ্ধের প্রতীকী রূপ তুলে ধরা হয়—যেমন ঘোড়া ‘দুলদুল’, পানির কলস, তলোয়ার, প্রতীকী কবর ইত্যাদি। ধর্মীয় আবহে সজ্জিত এসব উপকরণ মিছিলের ভাবগম্ভীরতা আরও গভীর করে তোলে।
মহরমের এই দিনে চট্টগ্রামের মিছিল শুধু শোক নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অনন্য বার্তা হয়ে ওঠে—যেখানে আত্মত্যাগ, আদর্শ ও ধর্মীয় একতার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে।