বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সড়ক যেন মরণ ফাঁদ, কমলনগর চর ফলকনের নাজির সড়কের বেহাল দশা, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

লক্ষ্মীপুর , সংবাদদাতা, কবির হোসেন রাকিব

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ নাজির সড়কটি চরম বেহাল অবস্থার মধ্যে আছে। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন আগে সলিং করা এই সড়কটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মেঘনার জোয়ারের পানির চাপে অন্তত ১০-১২টি স্থানে ভেঙে গেছে। জোয়ারে ইটের সলিং বিলিন হয়ে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কয়েকটি গ্রামের প্রতিদিন কয়েকহাজার পথচারী চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ছেন। শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। অবিলম্বে সড়কটি পুনর্নিমাণ ও সংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাজির সড়কটি দিয়ে মাওলানা পাড়া, আব্দুল মালেক হাওলাদার পাড়া, হাজি ইসমাইল মাস্টার পাড়া সহ আশপাশের অনেক সমাজের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। বিশেষ করে এই সড়কে অবস্থিত তাবলিগ জামাতের মারকাজ মসজিদে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মুসল্লি আসা যাওয়া করেন নিয়মিত। তবে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনসহ জনসাধারণের চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরফলকন মারকাজ মসজিদ সংলগ্ন হাজিরহাট থেকে মাতাবব্বর হাট পাকা রাস্তার মাথা হয়ে দক্ষিণ দিকে লুধুয়া রাস্তার মাথা পর্যন্ত নাজির সড়ক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রায় ১০০০ মিটারের এ সড়কটিতে সলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে কিছুদিন না যেতেই মেঘনার প্রবল জোয়ারে সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বর্তমানে অন্তত ১০-১২টি স্থানে সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সড়কটিতে চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন এলাকার শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, গর্ভবর্তী নারী ও রোগীরা। জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি, অসুস্থ রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি রিকশাও চলতে চায় না সড়কটিতে। সড়কটি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা হাজী ইসমাইল মাস্টার বলেন, এটা আমাদের এলাকার একমাত্র চলাচলের রাস্তা। স্কুল, কলেজ, বাজার, হাসপাতাল সব জায়গায় যাওয়া-আসা এই রাস্তার উপরে নির্ভর। কিন্তু এখন চলাফেরা করাটা খুব কষ্টকর। শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। কাদা ও ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। চিকিৎসা নিতে যাওয়া মোঃ ইব্রাহিম বলেন, জরুরি অবস্থায় রিকশাও আসে না। পায়ে হেঁটে কাদা ও পানি মাড়িয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান মান্না জনদুর্ভোগের বিষয়ে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও উদাসীনতায় সড়কের এই বেহাল দশা। এ বিষয়ে চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাগা বলেন, আমি এই সড়কের দুর্ভোগের বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। সামনের প্রকল্পে উনি চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাহাত উজ জামান জানান, নাজির সড়কের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সড়কটি গ্রামীন সড়কের আওতাভুক্ত হলে এই অর্থবছরে সংস্কারের ব্যাবস্থা করা হবে। আর যদি এলজিইডির আইডিভুক্ত হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হবে।

Facebook
WhatsApp
Email
Pinterest
Telegram